সুনসান খন্দকার মোশাররফের সাম্রাজ্য: দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও পতনের গল্প
ফরিদপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একসময়কার ক্ষমতাসীন সাম্রাজ্য এখন সুনসান বিরানভূমি। এক সময় যেখানে দুর্নীতি ও প্রভাব খাটিয়ে গড়ে উঠেছিল শত কোটি টাকার সম্পদ, সেখানে আজ নিস্তব্ধতা। ফরিদপুর শহরের বদরপুর, কমলাপুর, ও ডিক্রিরচরে স্থাপিত তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি, যার বাজারমূল্য প্রায় শত কোটি টাকা, এখন পরিত্যক্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খন্দকার মোশাররফের দখলদারির শিকার হয়েছে অসংখ্য সাধারণ মানুষ। জমি দখল, নির্যাতন, ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি ও তার অনুসারীরা গড়ে তুলেছিলেন এক দুর্নীতির সাম্রাজ্য। ক্ষমতার শীর্ষে দুর্নীতির উৎসব ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় শ্রম মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন খন্দকার মোশাররফ। এই সময়েই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে মানি লন্ডারিং, সম্পত্তি দখল, এবং সরকারি কাজে প্রভাব খাটানোর। স্থানীয় সূত্র জানায়, ফরিদপুর শহরে ‘আফসানা মঞ্জিল’ নামে তার বাড়ি শুধু বিলাসিতা নয়, এটি ছিল ক্ষমতার প্রতীক। ৫০ বিঘার বিশাল জমি, যার মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে ছিল মাত্র দুই বিঘা, বাকিটা দখল করা হয় বলেও অভিযোগ। মানি লন্ডারিং মামলার জালে অনুসারীরা ২০২০ সালের শুদ্ধি অভিযানে তার একাধিক অনুসারী গ্রেফতার হন। পুলিশের সিআইডি ২০০০ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলায় তার ভাই খন্দকার বাবরসহ অনেককে অভিযুক্ত করে। তবে শেখ হাসিনার আত্মীয় হওয়ার সুবাদে খন্দকার মোশাররফ আইনের হাত থেকে বেঁচে যান এবং বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন। পতনের গল্প দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলেও তিনি ও তার পরিবার দেশের বাইরে থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, দখল করা জমি ও সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হোক।
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ এ ১০:৩১ PM