জাতীয় পার্টির ইতিহাস: সংঘাত, বিভাজন ও রাজনৈতিক বিবর্তন
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় পার্টি, যার চেয়ারম্যান ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে বর্তমানে জাতীয় পার্টির তিনটি আলাদা অংশও রয়েছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আন্দালিব রহমান পার্থ ও কাজী জাফর আহমেদ। এরশাদের ক্ষমতা দখলের তিন দিনের মাথায় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি মনোনীত হন বিচারপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরী। এরশাদের পরিকল্পনায় ১৯৮৩ সালের ২ নভেম্বর গঠিত হয় 'জন দল', যেখানে তিনি বিএনপির ১৯ দফার আদলে নতুন ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কিন্তু এরশাদ রাষ্ট্রপতির পদ দখল করলে আহসানউদ্দিন 'জন দল' থেকে সরে দাঁড়ান। পরবর্তীতে, এরশাদ নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম 'জাতীয় ফ্রন্ট' গঠনের চেষ্টা করেন, যেখানে বিএনপি নেতা শাহ আজিজের নেতৃত্বে বিভিন্ন দলের সমন্বয় ঘটে। ১৯৮৫ সালের ১ অক্টোবর এরশাদ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এবং কয়েক মাস পরে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় পার্টি। ১৯৮৬ সালের সংসদীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন পেয়ে বিজয়ী হয়, যেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু দল অংশ নেয়নি। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি একাই ২৫১টি আসন পায়, কিন্তু ১৯৮৯ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের ফলে ১৯৯০ সালে পদত্যাগে বাধ্য হন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসন পায়, তবে এরশাদ ও তাঁর নেতৃত্বাধীন দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন সত্ত্বেও জাতীয় পার্টি দুই প্রধান দলের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে যান এরশাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাজিউর রহমান মঞ্জু, যিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি গঠন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে কাজী জাফরও জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে যান এবং আলাদা দলের নেতৃত্বে আসেন। এই সমস্ত ঘটনাবলি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যে জাতীয় পার্টির সংকট ও বিবর্তনকে স্পষ্ট করে তোলে।
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এ ১১:২১ AM